অনুরণন
- অনির্বাণ মিত্র চৌধুরী ২৭-০৪-২০২৪
সময়ে অসময়ে কারণে অকারণে মনের কোণে উঁকি দেয়া কিছু বিচ্ছিন্ন অনুভূতির সংকলন]
১
আমার স্বপ্নগুলো বারবার আটকে যায়
তোর দুঃস্বপ্নের চিলেকোঠায়...
২
মন খারাপের বাতায়নে জানলা খোলা রাখিস
পালিয়ে যাবার ইচ্ছে হলেই আমায় একটু ডাকিস।
৩
আমি এগিয়েছি এক পা করে,
তুমি পিছিয়েছো দু'পা
তোমার আমার দূরত্ব আজ
যায় না ফিতেয় মাপা।
৪
তোমার জন্য এক ফালি চাঁদ, জোছনামাখা রাত
তোমার জন্য খালি রেখেছি আমার দখিন হাত।
তোমার জন্য একগুচ্ছ গোলাপ— হলুদ কিংবা লাল
তোমার প্রেমের নেশায় মজে, হচ্ছি প্রেম-মাতাল।
৫
দৃষ্টি আমার থমকে গেছে
তোমার চোখের মায়ায়
হৃদয় আমার প্লাবিত আজ
প্রেমের অঝোর ধারায়
ভাবনাগুলো আটকে আছে
তোমার আবেগী কল্পনায়
মনজমিন আজ হয়েছে রঙিন
নিগূঢ় প্রেমের আলপনায়।
৬
তুই কী আমার সঙ্গী হবি দুঃখ সুখে?
প্রেমের জোয়ার আনবি ডেকে শুষ্ক বুকে?
তুই কী প্রেমের ফুল ফোটাবি পাথর শিলায়?
মিষ্টি প্রেমের রঙ ছড়াবি শিরায় শিরায়?
৭
তোমার ভালোবাসা নিতে পারি নি আমি
ভেবো না এ তোমার অযোগ্যতা,
আসলে ওটা আমারই ব্যর্থতা।
৮
তোমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দিবো সব বাধা
তোমার চোখে চোখ রেখে ভুলে যাই সব ব্যথা
তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুচে যায় অস্থিরতা
তোমার প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে খুঁজি জীবনের পূর্ণতা।
৯
যদি একদিন হঠাৎ করে
হারিয়ে যাই দূরে, বহুদূরে
নীল আকাশে, ঐ মেঘেদের দলে
বলো, খুঁজবে কি আমায়?
সাদা-কালো মেঘমালায়
চাতক চোখে, আকাশ দেখার ছলে?
১০
তোমার মনের গভীরতায় খাচ্ছি হাবুডুবু
স্নিগ্ধ চোখের শীতল মায়ায় কাঁপছি জবুথবু।
১১
আমার যত অন্যায় আবদার, সব-ই তোকে ঘিরে
বিনয় করে বলছি, প্লিজ যাস না আমায় ছেড়ে।
১২
শোন রে মেয়ে,
এই মনজমিন তোকে বর্গা দিমু,
যত ইচ্ছা ভালবাসা ফলাস।
১৩
আমার সব কবিতা তোকেই দেবো, মাইরি বলছি
যদি একবার বলিস, তুই আমার হবি!
১৪
দরদিয়া, তুমি হিয়ার ভিতর প্রেমের দিয়া জ্বেলে
মন পিঞ্জিরার খাঁচা ভেঙে কোথায় উধাও হলে?
১৫
কেন বারেবার ফিরে যাই আবার
তোমার কাছে চাই অধিকার
কোন সে মায়ায়, টানছো আমায়
তোমার চোখেই দেখি স্বপ্ন আমার।
১৬
রাজনন্দিনী,
আমার গরিবিয়ানায় তোমায় স্বাগতম।
হয়তো আমার কিছু নেই,
গাড়ি নেই, বাড়ি নেই,
কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ নেই,
পয়সাকড়ি, বিত্ত-বৈভব কিছুই নেই।
আছে শুধু একখন্ড জমিন হৃদয়পুরে
ওটা নাহয় তোমার নামেই লিখে দেবো।
১৭
হৃদয়হীনা, আমি এখনো রাত জাগি,
একবুক শুন্যতা নিয়ে
নিকোটিনের নীলবিষ আমার
শিরায় উপশিরায় যাচ্ছে ছড়িয়ে।
১৮
নিকোটিনের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিলাম তোকে
ভালো থাক তুই, সুখে থাক অন্যের বুকে।
১৯
মেয়ে,
তুই আমার শীতের সকালে শিশিরধৌত উষ্ণ রোদ
এক চিলতে উঁকি দিয়ে ভাঙ্গিস কুয়াশার অবরোধ।
২০
কোলাহলে কিংবা নির্জনে,
নৈঃশব্দে কিংবা গর্জনে,
স্বপ্নে কিংবা জাগরণে,
প্রলয়ে কিংবা সৃজনে,
খুঁজি ফিরি নিজেকে
একান্ত আমার আমি-কে।
২১
কী নামে আজ ডাকবো তোকে,— পাষাণী না হৃদয়হীনা?
ভালোবাসা চাইতে গিয়ে পেলাম শুধু একরাশ ঘৃণা।
২২
মেয়ে,
ভূমিকম্প বোঝ;
হৃদকম্প বোঝ না!
২৩
বলেছিলি সেদিন, ভুলে যেতে তোকে
দেখে যা, তোকে ভুলে কি সুখে আছি
হারাবার শোক চেপে রেখেছি এই বুকে,
কষ্ট কষ্ট সুখে আজও আমি বাঁচি।
২৪
ভীড় করে হতাশা নষ্ট মগজে
কষ্টের আঁকিবুঁকি স্মৃতির কাগজে।
২৫
যখনই তুমি চোখে রাখো চোখ
সেরে যায় মনের সব অসুখ।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভর করে উন্মাদনা,
হয়ে যাই প্রেম মাতাল উজবুক।
২৬
মেয়ে, তুমি যাচ্ছো চলে
হৃদয়ে ঝড় তুলে
আমি তাই খেই হারিয়ে
যাচ্ছি ডুবে অতলে।
২৭
মেয়ে, তুমি বেঁধো না'কো খোঁপা,
উড়ুক তোমার চুল
কানের খাঁজে আমি দেবো গুঁজে
সূর্যমুখী ফুল।
২৮
মেয়ে, লাস্যময়ী হাস্য তোমার
বড্ড মনোহারী
তোমার চোখের অতল নীলে
আমি ডুবে মরি।
২৯
মেয়ে, অমন করে তাকিও না প্লিজ,
কামনার আগুনে পুড়ে যায় অন্তর
অমন করে আর হেসো না'কো মেয়ে,
বুক জুড়ে শুরু হয় কামনার ঝড়।
৩০
তুই যে এখন, ব্যস্ত ভীষণ
আমায় ভাবার নেই দরকার!
আছিস সুখে কোন মুলুকে?
পাস না সময় খবর নেবার?
৩১
স্বপ্নগুলো বারেবারে বাধা পায়
দুঃস্বপ্নের দালানে
তবুও আমি স্বপ্নঘুড়ি উড়াই
শুভ স্বপ্নের সন্ধানে।
৩২
তুই কি আমার চশমা হবি চোখে?
৩৩
আমি যতবারই তোর কাছে যাই একমুঠো ভালবাসা নিয়ে
নীরবে ফিরে আসি আবার, শুধু তোকে হারানোর ভয়ে।
৩৪
জেগে আছি একা আমি
জেগে আছে একা চাঁদ
শুন্যতা গুমরে মরে,
বাড়ে শুধু অবসাদ।
৩৫
একদিন এভাবেই হারিয়ে যাবো,
যেভাবে শিশিরকণা হারায় সূর্যরশ্মির আগমনে...
৩৬
জানি না কেন, মাঝে মাঝে সবকিছু অর্থহীন মনে হয়
রঙিন স্বপ্নগুলো কেমন জানি বিবর্ণ হয়ে যায়।
নিরাশার হাতছানিতে স্বপ্ন দেখতেও লাগে ভয়;
ইচ্ছেগুলো প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুলে যেতে চাই!
৩৭
বেশি তেড়িবেড়ি করিস না রে মেয়ে
ফাঁসিয়ে দেবো মনচুরির দায়ে।
৩৮
এভাবে পরাজিত সৈনিকের মত
আর কতদিন বেঁচে থাকা যায়?
মরণ যদি হয় মরণের আগে,
গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকা দায়।
বেঁচে থাকা দায়।
৩৯
হতাশার দোলাচলে দোদুল্যমান জীবনপ্রবাহ
নিরাশার কাঁটাতারে মোড়া দেহে অসহ্য প্রদাহ।
৪০
ঝর ঝর ঝর ঝরছে বৃষ্টি
শন শন শন বইছে হাওয়া
তর তর তর যাচ্ছে বেড়ে
মনের উষ্ণ চাওয়া।
হিম হিম হিম হিমেল হাওয়া
গুন গুন গুন গান যে গাওয়া
আনচান আনচান অন্তর
চাইছে তোমার ছোঁয়া।
৪১
শোন মেয়ে, বলছি তোমায়—
একটা সুযোগ চাই
মনে বড় সাধ ছিলো,
সিঁদুর রঙে তোমার সিঁথি রাঙাই।
৪২
যাবি কতো দুর আর একা একা
আমায় একলা ছেড়ে
যেখানেই তুই লুকিয়ে থাকিস
আনবো ঠিকই ধরে।
৪৩
আমি সেই কবে থেকে আছি দাঁড়িয়ে
বোকার মতোন দু'বাহু বাড়িয়ে
তুমি যে কোথায় গেলে হারিয়ে
প্রেম তাই ফেরারি হয়ে বেড়াচ্ছে পালিয়ে।
৪৪
তুমি ফিরে তাকালে না বোলে
আমার বুকে ভীষণ খরা
তুমি যেই না ফিরে তাকালে
সেই থেকে মন দিশেহারা।
৪৫
একটা হাত চাই,
যে হাতের মুঠোয় থাকবে
আমার পুরো পৃথিবী।
একটা মুখ চাই,
যে মুখের পানে তাকালে
পবিত্র মনে হয় সব-ই।
৪৬
প্রেম,
তুমি কবিতা হয়ে নেমে এসো আমার কলমে,
পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে ওঠো।
৪৭
প্রিয়তা, তুমি কবিতা ছেড়ে উঠে এসো;
হয়ে ওঠো জীবন্ত
প্রেম জেগেছে প্রাণে, তাই মনের বাতায়নে
আজ মেতেছে বসন্ত।
৪৮
একটিবার তোমার অধর ছোঁবো বোলে
আনাড়ির মতোন হাত বাড়িয়েছিলাম
সেই যে তুমি পালালে
আর ফিরে এলে না;
চির অধরাই রয়ে গেলে।
৪৯
অবসর ভেঙে এসো তুমি
প্রেমের ময়দানে;
সৃষ্টি হোক ইতিহাস।
৫০
একলা আমি, নির্ঘুম রাত
মেঘের আড়ালে লুকানো চাঁদ।
একলা আমি, নিস্তব্ধ চারপাশ
মগজ জুড়ে একরাশ বিষাদ।
পুরো শহর ঘুমিয়ে গেছে,
ছুটোছুটি, কোলাহল থেমে গেছে
আমার অনিদ্রিত আঁখিযুগল
এখনো নির্বিঘ্নে জেগে আছে।
৫১
থানায় একটা জিডি করবো তোমার নামে।
তুমি প্রতিরাতে স্বপ্নে এসে আমার ঘুম নষ্ট করে
পালিয়ে যাও মনের অজান্তেই।
আর আমি সারারাত নিদ্রাহীন কাটাই!
এ কেমনতর খেল গো তোমার, মেয়ে?
অনিদ্রায় রজনী আমার যায় ফুরিয়ে।
৫২
তোমাকে ছোঁব বলে হে সুখপাখি
চেপে রেখেছি কত কষ্ট
কতটা স্বপ্ন করেছি নষ্ট
জানো কি তুমি, জানো কি?
৫৩
তপ্ত বিকেলে
রৌদ্রের প্রখরতায়
একাকি হেঁটে চলা
পিচঢালা রাস্তায়।
দমকা হাওয়া এসে
ছুঁয়ে দিয়ে যায়
ঘামে ভেজা শরীর
স্বস্তির ছোঁয়া পায়।
৫৪
বেশি কি আর চাইবো বলো,
একজীবনে তোমায় পেলে?
বৃথা যাবে এ মানব জনম
তুমিহীনতায় মরণ হলে।
তুমি, শুধু যে তুমিই আছো
আমার ধ্যানে-জ্ঞানে-ভাবনায়
হৃদমন্দিরে আসন পেতেছো
মিশে আছো সমস্ত সত্ত্বায়।
৫৫
মুঠোফোনে অবিরাম বক বক, বক বক
কথা হয় রাতদিন টক-ঝাল, ঝাল-টক
ফেসবুক চ্যাটিংয়ে,
এসএমএস ডেটিংয়ে
জমছে, জমছে প্রেম ব্যাপক।
৫৬
মেয়ে,
তোমার প্রেমে সিক্ত হতে চাই;
অবজ্ঞার আঘাতে রিক্ত হতে নয়।
৫৭
যদি বিশ্বাস না হয় তবে এই হৃদয় চিরে দ্যাখ,
সেখানে প্রতিটা স্পন্দনে স্পন্দনে তোরই নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
মাথার খুলিটা ভেঙ্গে পুরো মগজটা নিয়ে দ্যাখ,
সেখানে তোর ভাবনারাই শুধু কিলবিল কিলবিল করছে।
আর কীভাবে বললে তুই বিশ্বাস করবি মেয়ে?
আমি তোকে যে ভালবাসি এ জীবনের চেয়ে।
৫৮
মেয়ে,
এ হাত ধরো আবার,
আরেকটি সুযোগ দাও আমায়
আমি আবার নতুন করে
তোমার প্রেমে পড়তে চাই।
৫৯
ফ্রেমেবন্দি ভালোলাগা,
প্রেমেবন্দি মন
আজন্ম সন্ধি তোর সাথে,
রইবে আজীবন।
৬০
আজ সারাদিন বৃষ্টি — টিপটিপ, ঝমঝম
বৃষ্টি বিলাসী মেয়ে আজ ভেঙেছে দ্বিধা, শরম।
আজ সারাদিন রবিঠাকুর — বৃষ্টিভেজা সুর
বৃষ্টিনেশায় নীল বেদনায় প্লাবিত হৃদয়পুর।
৬১
আমার মন্দ থাকার কারণ হলি তুই
তবু, মন বাড়িয়ে তোকেই কেন ছুঁই?
৬২
কোন সে টানে তোমার পানে
যাই, ছুটে যাই সংগোপনে
কিসের আশায় পথ চেয়ে হায়
আসবে তুমি কোন অবেলায়
এসো তুমি, বুকের কাছে
স্পর্শে তোমার দুলুক এ প্রাণ
এসো তুমি, সুরে ভেসে
দু'জন মিলে গাইবো এ গান।
৬৩
আমাকে ছেড়ে যাবার পর
ভেবো না, আমি দেবদাস হবো
চন্দ্রমুখীর ভালাবাসা পেলে,
দেহ-মন সব সঁপে দেবো।
৬৪
তোর কথা মনে পড়লেই,
দু'চোখ জুড়ে ঝাপসা আকাশ!
৬৫
সীমাবদ্ধতাতেই ব্যাপ্তি আমার,
অপূর্ণতাই ব্যাপ্তি
সুখ যে আমার অসহ্য লাগে,
দুঃখে খুঁজি শান্তি।
৬৬
বড্ড বেশি প্রত্যাশা করে ফেলি।
যতোটা না প্রাপ্য তারচে' কয়েকগুণ বেশি দাবি করি কেন?
যখনই প্রত্যাখ্যাত হই,
তখনই খেয়াল হয়—
আমি তো ততোটা যোগ্য নই!
৬৭
মনা,
কোন বাজারে সুখ হয় রে বেচাকেনা?
পেতাম যদি নিতাম কিনে ষোল আনা।
৬৮
বসেনা মন কোন কাজে
অচেনা সুর হৃদয়ে বাজে।
কাটেনা সময় একা একা
দুর নীলিমায় তাকিয়ে থাকা।
ভাবনাগুলো সব অগোছালো
স্বপ্নগুলো খুব এলোমেলো।
জানিনা কেন যে এমন হয়?
কিসের মোহে অশান্ত হৃদয়?
৬৯
চাই না পেতে ফ্যান-ফলোয়ার;
শ'য়ে শ'য়ে লাইক
চাই না পেতে ডিএসএলআর,
হাল ফ্যাশনের বাইক।
চাই যে শুধু তোমার সাথে
আজন্ম এক সন্ধি
হৃদয় ফ্রেমে তোমাতে আমাতে
প্রেমের যুগলবন্দী।
৭০
সেদিনও আকাশে কালো মেঘ ছিলো,
বাতাসে ছিলো বৃষ্টির আহবান
চোখের কোণে জমেছিলো জল,
হৃদয়ে বেজেছিলো ভাঙনের গান...
৭১
কেউ যদি এক কাপ হেমলক দিতো এনে
চুমুকেই পালিয়ে যেতাম সুদূর মহাশূন্যে।
জাগতিক দুশ্চিন্তারা উবে যেত এক নিমিষে
না-পাওয়াগুলো ভাসিয়ে দিতাম নীল বিষে।
(সমাপ্ত)
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।